রমজান মাসে ওজন নিয়ন্ত্রণের ডায়েট প্ল্যান জেনে নিন। যারা নিয়ম মেনে কোন ডায়েট প্ল্যান মেনে চলেন তাদের জন্য রমজান মাসে একই ডায়েট প্ল্যান মেনে চলা কঠিন হয়ে পড়ে। আবার অনেকেই মনে করেন রোজার মাসে সারা দিন না খেয়ে থাকার কারণে ওজন কমে যায়। কিন্তু এটা ভুল ধারণা। আমরা সাধারণত ৩ বেলা খাই আর রোজার সময়েও ইফতার, রাতে আর সেহেরি মিলিয়ে ৩ বেলা-ই খাচ্ছি। তাহলে ওজন কমবে কীভাবে? তাছাড়া অনেকেই রোজা রাখার পর ইফতারের সময় সামনে বিভিন্ন খাবার দেখলে পেট ভরে গেলেও শুধুমাত্র চোখের ক্ষুধা মেটানোর জন্য খাবার খেতেই থাকে। তখন আর নির্দিষ্ট ডায়েট প্ল্যানের কথা মনে থাকেনা। আমাদের দেশে ইফতারের সময় সাধারণত তেলে ভাজা খাবার বেশি থাকে। এগুলো একই সাথে ওজন বাড়ায় এবং এসিডিটির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এরপর আসে সেহরি আর রাতের খাবারের কথা। ইফতারের ৩/৪ ঘন্টা পরেই রাতের খাবারের সময় হয়ে যায়। তখন পেট ভরা থাকার পরেও অনেকে মনে করে যে সারা দিন না খেয়ে থাকব, তার চেয়ে খেয়ে নিই। তাই দেখা যায় ঘুরে ফিরে আমরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার খেতেই থাকি। তাছাড়া বিভিন্ন দাওয়াত আর বাইরের দোকানে আকর্ষণীয় সব অফার দেখে সেখানে ইফতার করা তো হবেই। কখনো বন্ধু-বান্ধবের সাথে, কখনো আত্মীয়দের সাথে। তাই এ সময় আমাদের একটু নিয়ম মেনে চলা উচিত যেন সুস্থ এবং স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে রোজা পালন করতে পারি। তাই আজকে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে রোজা পালন করার একটি ধারণা দেয়া হলো। আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই লিখছি , তাই আমি জানি এতে আর যাই হোক আপনার ক্ষতি হবেনা। ইফতারঃ ০১. ইফতারে সবার আগে পানি পান করবেন। খালি পেটে তেলে ভাজা খাবার খেলে এর ফল ভয়াবহ হতে পারে। তাই এক গ্লাস না পারলেও অন্তত আধা গ্লাস পানি পান করে অন্য কিছু খান। ০২. পেঁয়াজু/ বেগুনী/ কাবাব ইফতারের সময় আমাদের দেশে পেঁয়াজু বেগুনী থাকবেই। আপনি ২টি পেঁয়াজু বা ২টি বেগুনী অথবা ২টি কাবাব খেতে পারেন। ১টি পেঁয়াজু আর একটি বেগুনী, একটি বেগুনী আর একটি কাবাব এভাবেও মিলিয়ে খেতে পারেন। খেয়াল রাখবেন যেন এ ধরনের খাবার ২টির বেশি না খান। কারণ প্রতিটি পেঁয়াজু, বেগুনী বা অন্য যে কোন তেলে ভাজা খাবারে ক্যালোরির পরিমাণ ৫০ থেকে ৭০ এর মত হতে পারে। একটি টিকিয়া কাবাবে ক্যালরি হলো ৮০ আর চপে ৮৫। যদি সিঙ্গারা খান তাহলে অবশ্যই একটি খাবেন কারণ তাতে ১৪০ ক্যালরি থাকে যা ২টি রুটির সমান! আর সিঙ্গারা খেলে পেঁয়াজু/ বেগুনী/ কাবাব খাবেন না। ০৩. হালিমঃ হালিমে বিভিন্ন রকমের ডাল আর মাংস মেশানো থাকে তাই এতে প্রচুর ক্যালরি থাকে। এক বাটি ভরে হালিম না খেয়ে আধা বাটি হালিম খান। দোকানের হালিম না খেয়ে বাসায় তৈরি করুন। এখন বিভিন্ন হালিম মিক্স মসলা পাওয়া যায় মার্কেটে। তাই বাসায় হালিম তৈরি করাটা এখন সবার কাছেই সহজ। pic ০৪. ছোলা মুড়িঃ যদি হালিম না খান তাহলে এক বাটি ছোলা মুড়ি খান কিন্তু যদি আধা বাটি হালিম খান তাহলে আধা বাটি ছোলা মুড়ি খান। কারণ এক কাপ মুড়িতে ৭০ ক্যালরি। আপনি যদি একই সাথে হালিম আর এক বাটি ছোলা মুড়ি খান তাহলে সেটাতে অনেক ক্যালরি হবে। ০৫. শরবতঃ অতিরিক্ত চিনি দিয়ে শরবত না তৈরি করে ডাবের পানি পান করুন। শরবত যে একদম ছেড়ে দিবেন তা বলছিনা। ৩/৪ দিন পর পর চিনি মেশানো লেবুর শরবত বা অন্য কোন ফলের শরবত খেতে পারেন। তবে বাইরে থেকে রঙ মেশানো শরবত এনে খাবেন না। ০৬. ১ টুকরো শশা খেতে পারেন। ০৭. একটি আপেল/ একটি ছোট কলা/ ৩/৪ টি লিচু। (প্রায় ৪০ ক্যালরি) রাতের খাবারঃ ০১. একটি রুটি / আধা কাপ ভাত/ অর্ধেক পরোটা (যে কোন একটি খাবেন) ০২. ২ টুকরো মাছ অথবা মাংস। ২টি মাছ আর ২টি মাংসের টুকরো এক সাথে খাওয়া যাবেনা। ০৩. যে কোন শাক ০৪. ২/৩ চা চামচ টক দই সেহেরিঃ অনেকেই সেহেরিতে কিছু খান না। কেউবা এক বা দুই কাপ চা খান। কিন্তু এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই খারাপ। আপনি সেহেরিতে কম খাবেন কিন্তু নিয়ম মেনে খাবেন। যেমন - ০১ আধা কাপ ভাত অথবা একটি রুটি ০২ ১ টুকরো মুরগীর মাংস ০৩ সবজি ১ কাপ ০৪ টক দই ১ কাপ যারা টক দই খেতে পারেন না তারা ১ কাপ সর ছাড়া দুধ খেতে পারেন। জরুরী কিছু কথাঃ - যদি পিৎজা খেতে চান তাহলে এক স্লাইসের বেশি খাবেন না। এক স্লাইসে প্রায় ৩০০ক্যালরি !! - বিভিন্ন দোকানে ফ্রাই করা মুরগীর প্রতিটি টুকরো তে প্রায় ২০০ ক্যালরি থাকে। তাই বুঝে শুনে খাবেন। - একটি ছোট প্যাকেটের ফ্রেঞ্চ ফ্রাই এ ২৭০ ক্যালরির মত থাকে। - ঝাল খাবার খাবেন না। - প্রচুর পানি পান করবেন ইফতারের পর থেকে। - মেয়নিজ বেশি না খেয়ে মার্জারিন খেতে পারেন। - গ্রিন টি পান করলে ভালো, নাহলে দুধ চিনি ছাড়া চা পান করুন। কারণ ইফতারে এমনিতেই প্রচুর ক্যালরি যুক্ত খাবার খাওয়া হয় তাই চায়ের সাথে দুধ চিনি মিশিয়ে অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণের প্রয়োজন নেই। রমজান মাস শুরু হওয়ার ৩/৪ দিন আগে থেকেই ক্যাফেইন গ্রহণ কমিয়ে দিলে ভালো। কারণ যারা বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করেন তারা রোজা পালনের কারণে হঠাৎ সারা দিন ক্যাফেইন গ্রহণ না করলে মাথা ব্যথায় ভোগেন। - ইফতারের পর অন্তত ২০-২৫ মিনিট হাঁটুন। - সেহেরি তে খাওয়া শেষ করে ১৫ মিনিট হাঁটুন। সেহেরিতে সময় নিয়ে উঠুন যেন শেষ মুহূর্তে তাড়াতাড়ি খেতে গিয়ে বেশি খেয়ে না ফেলেন। এভাবে একটু নিয়ম মেনে আর ক্যালরি হিসাব করে যদি খান তাহলে আশা করছি এই মাসে তেলে ভাজা আর দোকানের খাবার খেয়ে আপনার ওজ়ন বাড়বেনা। যাদের ওজন বেশি তারা বাসার বাইরে খেলে এমন ভাবে খাবেন যেন আপনাদের ক্যালরি গ্রহণ ১৪০০ এর মধ্যে থাকে।
(RSS generated with FetchRss) ঢাকা বাজার on Facebook http://bit.ly/2r4jJAX
(RSS generated with FetchRss) ঢাকা বাজার on Facebook http://bit.ly/2r4jJAX