নওগাঁয় থাই পেয়ারা চাষে সফল শিক্ষক শামসুর
নওগাঁ প্রতিনিধিনওগাঁর মান্দায় থাই পেয়ারার বাগান করে সফল শিক্ষক শামসুর রহমান। উপজেলার গণেশপুর ইউনিয়নের গনেশপুর গ্রামে (সতিহাটের পাশে) প্রায় ৫৫বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন মিষ্টি ও সুস্বাদু থাই পেয়ারার বাগান। প্রতিদিন তার বাগান থেকে প্রায় ৪০ মণের মতো পেয়ারা উঠানো হয়। আর এসব পেয়ারা নওগাঁ সহ কয়েকটি জেলায় সরবরাহ করা হয়। এলাকায় তিনি একজন আদর্শ কৃষক হিসেবে পরিচিত পেয়েছেন। তিনি ‘সতিহাট কেটি উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজে’ বাংলা বিভাগের শিক্ষক।
ছাত্রজীবন থেকে কৃষির সাথে সম্পৃক্ত শামসুর রহমান। পড়াশুনার পাশাপাশি ২০০২ সাল থেকে তিনি বিভিন্ন ধরনের ফলের চাষ করেন। ২০০২ সালে অন্যের কিছু জমি ইজারা নিয়ে প্রথমে শুরু করেন শবরি কলার আবাদ। এরপর সাগর কলা এবং সবশেষে চিনি চম্পা কলার চাষ করেন। কলা চাষে কিছুটা মুনাফা অর্জন করলেও গাছে মোড়ক ধরায় লোকসানের পরিমাণ টা দাঁড়ায় বেশি। ২০১১ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে বাংলাতে অর্নাস-মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
কলাতে লোকসানের পর গত পাঁচ বছর আগে ১০ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে থাই পেয়ারার বাগান শুরু করেন। থাই পেয়ারার লাভজনক হওয়ায় জমির পরিমাণ বাড়তে থাকে। বতর্মানে ৫৫ বিঘা জমির উপর পাঁচটি থাই পেয়ারার বাগান রয়েছে। প্রথম দিকে জমি ইজারা টাকার পরিমাণ কম থাকলেও বর্তমানে প্রতিবছর ১৬ হাজার টাকা বিঘা হিসেবে ইজারা নেয়া হয়েছে।

শিক্ষক শামসুর রহমান পূর্বপশ্চিমকে বলেন, ছাত্র জীবন থেকেই কৃষিতে সম্পৃক্ত। বিভিন্ন ফলের বাগান লাভজনক হওয়ায় কৃষিতে তিনি মনোনিবেশ করেন। পড়াশুনা শেষ করে গত পাঁচ বছর আগে অন্যের জমি ইজারা নিয়ে থাই পেয়ারার চাষ শুরু করেন। আর এ কাজে তাকে সার্বিক সহযোগীতা করছেন স্ত্রী নূরী জান্নাত নেসা। জমি চাষ করে সরাসরি জমিতে চারা রোপন করেন তিনি। প্রতি বিঘাতে সারিবদ্ধ ভাবে নির্দিষ্ট দুরুত্বে প্রায় ২০০-২৫০টি পেয়ারা চারা রোপন করা হয়। পরবর্তীতে যখন চারা জমিতে লেগে যায় তারপর জৈবসার সহ সার দেয়া হয়। বগুড়া, নাটোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে থাই পেয়ারার চারা সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি চারা খরচ পড়েছিল ২০-৩০ টাকা।
প্রথম বছর প্রতি বিঘাতে খরচ পড়ে প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা। গাছ বড় হওয়ার পর দ্বিতীয় বছর খরচ কিছুটা বৃদ্ধি পায়। পেয়ারা লাগানোর ৬মাস পর থেকে গাছে পেয়ারা আসা শুরু করে। গাছে যখন পেয়ারা আসা শুরু করে তখন অল্প পরিমাণ উঠে। এরপর প্রতিদিন প্রায় ৩০-৪০ মণ উঠানো হয়। প্রতিমণে পাইকারী দাম পাওয়া যায় ১৬শ টাকা। পাইকাররা এসে জমি থেকে কিনে নিয়ে যান। নওগাঁ সহ কয়েকটি জেলায় সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিন প্রায় ২০ জন শ্রমিক কাজ করে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে কিছু জমিতে মাল্টা লাগাবেন।
তিনি বলেন, নিজের তেমন জমিজমা নাই। অন্যের জমি ইজারা নিয়ে চাষাবাদ করা হয়। বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে ২০১১ সালে বাংলা বিভাগে অর্নাস-মাস্টার্স করার পর কৃষিতে আরো বেশি মনোনিবেশ করেন। এরপর সতিহাট কেটি উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশে শিক্ষিত বেকারদের সংখ্যা বেশি। সবাই চাকুরির পেছনে হন্য হয়ে ঘুরছে। যদি চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হয়ে কিছু করতে চায় তবে সফলতা আসবে বলে মনে করি।
বাগানে কাজ করা নিয়মিত শ্রমিক আজিজুল ও পারভেজ মোশারফ সহ কয়েকজন বলেন, গত পাঁচ বছর থেকে তারা বাগানে নিয়মিত ২০-২৫জন কাজ করছেন। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কাজ করে মুজুরি পান ২৫০ টাকা। পেয়ারা বাগানে তারা সারা বছরই কাজ করতে পারেন। বাগানের ঘাস নিড়ানো থেকে শুরু করে পানি ও সার দেয়াসহ বিভিন্ন পরিচর্চা ও প্রতিদিন বাগান থেকে পেয়ারা উঠিয়ে প্যাকেটজাত করাই তাদের কাজ।
মান্দা উপজেলা কৃষি অফিসার রাকিবুল হাসান পূর্বপশ্চিমকে বলেন, বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আমার কাছে পরামর্শ নিতে আসছিল। তাদেরকে মিশ্র ফলের বাগানের বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে পেয়ারা, বিভিন্ন জাতের আম, ভিয়েতনাম নারকেল, বন সুন্দরী কুল, ড্রাগন ও মাল্টা সহ কয়েকটি ফলের বাগান করতে উদ্বৃদ্ধ করা হয়েছে। এতে করে সারা বছরই একটা আয় আসবে। শামসুর রহমানের পেয়ারা বাগানটি পরিদর্শন করা হয়েছে। তিনি সেদিক দিয়ে বেশ সফল। বিভিন্ন সময় মোবাইলে তিনি পরামর্শ নিয়ে থাকেন। কৃষি অফিস থেকে তাকে সহযোগীতা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমার মনে হয় চাকরির পেছনে না ছুটে যদি কেউ উদ্যোক্তা হন। বিশেষ করে মিশ্র ফলের বাগান করে শিক্ষিত সচেতন বেকাররা অবশ্যই সফল হবে। কেউ যদি আগ্রহী হন কৃষি অফিস থেকে তাকে সহযোগীতা করা হবে।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম
Post Written by :
Original Post URL : https://ppbd.news/whole-country/174253/নওগাঁয়-থাই-পেয়ারা-চাষে-সফল-শিক্ষক-শামসুর
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD