সেশনজট ফিরিয়ে আনছে করোনাভাইরাস
এ বছরের মার্চে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার পরীক্ষা শুরু হয়ে এক বা দুটি পরীক্ষার পর সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে। অনেক শিক্ষার্থীর এরইমধ্যে পরীক্ষা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকানোর কথা থাকলেও তারাও পড়ে আছেন অনিশ্চয়তার মধ্যে।
জাতীয়
নিজস্ব প্রতিবেদককরোনা সংক্রমণের কারণে সংকটে পড়েছে দেশের শিক্ষা কার্যক্রম । মহামারীর প্রথম দুই মাসে ধীরে ধীরে দেশের সব অফিস, আদালত, দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও গণপরিবহন বন্ধ থাকার পর সবই খুলে গেছে। কিন্তু এখনও বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা আসেনি।
গত শতকের আশি ও নব্বই দশকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা, সংঘাত ও সহিংসতায় ঘন ঘন ক্যাম্পাস বন্ধের ফলে সেশনজট পিছু ছাড়েনি উচ্চশিক্ষায়। ঠিক তেমনি করোনা ভাইরাস সংকটে দীর্ঘ ছুটির জেরে সেশনজটের সেই পুরনো তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে চলছেন বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এদিকে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভাইরাস সংকটের তিন মাস পর অনলাইনে ক্লাস শুরু করলেও তাতে সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়নি। তাই ক্লাস চললেও পরীক্ষার বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এ বছরের মার্চে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার পরীক্ষা শুরু হয়ে এক বা দুটি পরীক্ষার পর সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে। অনেক শিক্ষার্থীর এরইমধ্যে পরীক্ষা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকানোর কথা থাকলেও তারাও পড়ে আছেন অনিশ্চয়তার মধ্যে।
মহামারী কতদিন প্রলম্বিত হবে, আবার কবে উচ্চ শিক্ষাঙ্গণগুলো স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরে আসবে সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছেন না দায়িত্বশীলরাও। এই পরিস্থিতিতে ছয় মাস থেকে এক বছর পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা।
এ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী মুহসীন আহমদ জানান, এ বছরের ডিসেম্বরে স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকানোর কথা ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে এখনও জুন মাসের প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষাও দিতে পারিনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের স্নাতকের শিক্ষার্থী সাজিদুজ্জামান জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে নয়টি কোর্সের মধ্যে মাত্র একটির পরীক্ষা দিয়েই বসে আছেন তারা। বাকি পরীক্ষাগুলো কবে হবে, তার ঠিক নেই।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী তাসনুবা তাহসিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে অলরেডি সেশনজটে পড়ে গেছি। নভেম্বর মাসে অনার্স ফাইনাল ইয়ার পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। ছয় মাস তো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। কোর্সগুলো করা হয়নি।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারজানা মুন্নী বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমাদের দুই সেমিস্টারের পরীক্ষা একসাথে নেবে বলছে। তাই অনলাইনে আমাদের সিলেবাস শেষ করা হচ্ছে। কিন্তু সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নিলেই তো হবে না। মিডটার্ম বা অ্যাসাইনমেন্ট এগুলোতেও তো সময় লাগবে।
করোনা মহামারীর কারণে সেশনজট নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, আশা করি শিক্ষার্থীরা বড় ধরনের সেশনজটে পড়বে না। যারা অনার্স ডিগ্রি বা মাস্টার্স ডিগ্রির টার্মিনালে আছে, তারা হয়ত কিছু দিনের জন্য সেশনজটে পড়তে পারে। তবে যারা ফার্স্ট ইয়ার বা সেকেন্ড ইয়ারে আছে তাদের সেশনজটে পড়ার কোনো শঙ্কা নেই।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, সেশনজট কমানোর জন্য আমরা কিছু বিষয়ের কথা ভাবছি। তবে আমরা এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। সেশনজট এড়ানোর জন্য ক্যাম্পাস খুললে শীতকালীন ছুটির মতো বড় ছুটি বাতিল করা এবং সাপ্তাহিক বন্ধ দুই দিন থেকে এক দিনে নামিয়ে আনার মতো বিষয়েও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা সেশনজট নিরসনে ক্রাশ প্রোগ্রাম গ্রহণ করব। তখন সেশনজট দ্রুতই কমে যাবে। তবে ছুটি যদি আরও ছয় মাস দীর্ঘায়িত হয়, সেটা চিন্তার বিষয়। তখন সেশনজটের আশঙ্কা থাকবে।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত ২৩ মার্চ সরকার সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এর আগেই দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। এখন পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুনিদিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
পূর্বপশ্চিমবিডি/ এনএন
Post Written by :
Original Post URL : https://www.ppbd.news/national/174036/সেশনজট-ফিরিয়ে-আনছে-করোনাভাইরাস
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD