মালয়েশিয়া প্রবাসী কালামের খোঁজ চায় পরিবার
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধিদুই বছর আগে মালয়েশিয়া যান আবুল কালাম নামে লক্ষ্মীপুরের এক ব্যক্তি। তিনি লক্ষ্মীপুর পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের মধ্য বাঞ্চানগর গ্রামের বাসিন্দা। পরিবারের অভিযোগ, এক বছর পরিবারের সাথে যোগাযোগ থাকলেও গত প্রায় ১১ মাস থেকে তার কোন খোঁজ নেই। স্বজনরা জানেন না তিনি এখন কোথায় আছেন কি ভাবে আছেন।
এদিকে তাজুল ইসলাম নামে এক আদম ব্যাপারীর নামে আদালতে মামলা দায়ের করেছে প্রবাসী আবুল কালামের স্ত্রী শাকিলা আক্তার। তিনি এই মামলায় তাজুল ইসলামকে আসামি করেন। তাজল রেনু মিয়া মাঝি বাড়ির মৃত আলী মিয়ার পুত্র।
আদালত সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ জুলাই সিনিয়র জুড়িশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আমলী আদালতে (সদর) বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইনে দায়ের হওয়া মামলাটি তদন্ত করছেন সদর থানা পুলিশ।
মামলায় তাজুল ইসলামের ছেলে মোরশেদ (২৭) ও তার স্ত্রী অহিদা খাতুনকেও আসামি করা হয়েছে।
এদিকে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এবং বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে বিদেশ গমন করায় ধার শোধে চরম বিপাকে পড়েছে প্রবাসী আবুল কালামের পরিবার। অর্থের সংকটে মানবেতন জীবনযাপন করছে পরিবারটি।
স্থানীয়রা জানান, ২০১৮ সালের আগষ্ট মাসে আবুল কালাম মালয়েশিয়া যান। যাওয়ার পর থেকে তিনি পরিবারের কাছে মোবাইল ফোনে জানান চুক্তি অনুযায়ী কাজ না দিয়ে আদম ব্যাপারী তাজুল ইসলাম তার সাথে প্রতারণা করেছে। এতে সে মালয়েশিয়াতে খুবই কষ্টে আছেন।
এক বছর বিভিন্ন ভাবে সে ওই দেশে কাজ করে কোনভাবে দিন পার করেছেন। গত ১১ মাস থেকে পরিবারের সদস্যদের সাথে তার যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেন পরিবারের লোকজন।
তাই নিখোঁজ দাবি করে আদালতে আদম ব্যাপারী তাজুল হোসেনসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন আবুল কালামের স্ত্রী শাকিলা আক্তার।
এ ব্যাপারে আবুল কালামের স্ত্রী শাকিলা আক্তার বলেন, ১১ মাস থেকে আমার স্বামীর সাথে আমাদের কোন কথা হয় না। সর্বশেষ তিনি ফোন করে বলেছেন ‘আমি বিপদে আছি’। এর আগেও তিনি ফোনে বলতেন তাজুল ইসলাম তার সাথে প্রতারণা করেছে। স্বামীর খোঁজ না পাওয়ায় আমরা মালয়েশিয়াতে পরিচিত স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করেছি, তারা আমার স্বামীর কোন সন্ধান দিতে পারেনি।
এরই মধ্যে আদম ব্যাপারী তাজুল ইসলাম দেশে ফিরে বাড়িতে আসলে আমার স্বামীর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি কোন সুদুত্তর দিতে পারেননি। তাই আমি আইনের আশ্রয় নিয়েছি।
শাকিলা আক্তার আরো বলেন, মালয়েশিয়াতে ফ্যাক্টরীতে মাসিক ২৫ হাজার টাকা বেতনে কাজের জন্য ভিসার মূল্য ধরা হয়েছে চার লাখ টাকা। ভিসার টাকা তাজুলের ছেলে মোরশেদ আলমের কাছে পরিশোধ করি। টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয়েছে। দেড় লাখ টাকা বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিই। বাকী টাকা আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার করি এবং স্বর্ণালংকার বন্ধক দিয়ে ৬০ হাজার টাকা নিই। এখন ঋণের টাকা নিয়ে বিপাকে পড়েছি। প্রতিদিন কোন না কোন এনজিও কোম্পানী কিস্তির টাকার জন্য আসে। দিব কোথা থেকে, সংসারই চলে না। ঘরে কলেজ পড়ুয়া দুই মেয়ে এবং মাদ্রাসায় পড়ুয়া এক ছেলে আছে। একদিকে স্বামীর খোঁজ নেই, আরেকদিকে ছেলে মেয়েদের নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে। আমি আমার স্বামীকে ফেরৎ চাই।
আবুল কালামের বড় মেয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার বাবাকে নিয়ে আমরা খুবই টেনশনে আছি। তিনি কোথায় এবং কিভাবে আছেন আমরা জানি না। ওনার সাথে যারা ছিলো তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি, তারাও কোন সন্ধান দিতে পারেনি। আমার বাবা যেন সুস্থভাবে আমাদের কাছে ফিরে আসতে পারে, সে প্রার্থনাই করি।
এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে আদম ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, আমি সঠিক ভিসায় আবুল কালামকে মালয়েশিয়াতে নিয়েছি। তাদের সাথে সাড়ে তিন লাখ টাকা ভিসার দাম হয়েছে, সে আমাকে দুই লাখ টাকা পরিশোধ করেছে। বাকী টাকা কাজ করে দেওয়ার কথা ছিলো। এরই মধ্যে আমি দেশে চলে আসি। আবুল কালাম নিখোঁজ হয়নি, সে মালয়েশিয়ার কারাগারে আছে। আমি খোঁজ-খবর নিয়েছি। অতি লোভে পড়ে ওই দেশের আইন অমান্য করে অবৈধভাবে অন্য লোকের কাজ করায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। এখন তারা আমার নামে মিথ্যা মামলা করেছে। আমার বাকি টাকাও পরিশোধ করেনি সে।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর রিয়াজুল করিম টিপু বলেন, আবুল কালামকে তাজুল ইসলাম শ্রমিক হিসেবে মালয়েশিয়াতে নিয়েছে। শুনেছি সে এখন মালেশিয়ার কারাগারে আছে।
এ ব্যাপারে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আজিজুর রহমান মিয়া বলেন, এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় তদন্ত করছে পুলিশ। তদন্তের কাজ এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।
পূর্বপশ্চিমবিডি/এসএম
Post Written by :
Original Post URL : https://ppbd.news/whole-country/174159/মালয়েশিয়া-প্রবাসী-কালামের-খোঁজ-চায়-পরিবার
Post Come trough : PURBOPOSHCIMBD